আপনি কি অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন?

এশনা বিনতে আলী

MENTAL HEALTH

দুশ্চিন্তা তো কম-বেশি আমরা সবাই করি! তবে কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা বা উদ্বেগ স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বেগ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কারো দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায় তখন মনোবিদের শরনাপন্ন হওয়া জরুরি। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, স্বাভাবিকের যেয়ে বেশি মাত্রার এই উদ্বিগ্নতা ও দুশ্চিন্তা, যা আপনার স্বাভাবিক জীবনকে ব্যহত করে, তাকে বলে ‘অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার’।

সাধারণত কেউ যখন অ্যাংজাইটিতে ভোগে সেটি তাকে দেখলে বোঝার উপায় থাকে না। অনেক সময় রোগী নিজেও তার এই রোগটির ব্যাপারে অবগত থাকেন না। তাই মনের বন্ধু জানাচ্ছে অ্যাংজাইটির কিছু লক্ষণ -

১। অ্যাংজাইটির মাত্রা বেড়ে গেলে শ্বাসপ্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে যায়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ও বুক ধড়ফড় করে।

২। অল্পতেই রেগে যাওয়া বা মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাওয়া অ্যাংজাইটির লক্ষণ। অ্যাংজাইটিতে ভোগা ব্যক্তি অনেক সাধারণ বিষয়ে দ্রুত রেগে যায়।

৩। অতিরিক্ত নেতিবাচক চিন্তা করা বা কোন একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক ভাবনা ভেবে অস্থির হয়ে যাওয়াও অ্যাংজাইটির লক্ষণ হতে পারে।

৪। দীর্ঘদিন যাবত অ্যাংজাইটিতে ভোগা ব্যক্তির ঘুমের সমস্যা হতে পারে। সময়মতো পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, নিয়মিত মাথা ব্যাথায় ভোগাও অ্যাংজাইটির লক্ষণ হতে পারে।

৫। অ্যাংজাইটিতে ভুগলে কাজে মনোযোগের ঘাটতি দেখা যায়। পড়াশোনা বা অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে অনাগ্রহ কাজ করে।

এই লক্ষণগুলোর বেশিরভাগই যদি একটি মানুষের মধ্যে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে তিনি অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন। নিজেই যদি নিজের অ্যাংজাইটির মাত্রা বুঝতে চান তাহলে মনের বন্ধুর অ্যাংজাইটি আলকেমিস্ট নামের গেমটি খেলতে পারেন। মনের বন্ধুর এই গেমটি প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে জানিয়ে দেবে আপনার অ্যাংজাইটির মাত্রা, ফলে মনোবিদ বা কাউন্সেলরের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আপনি সহজেই নিতে পারবেন।

অ্যাংজাইটির মাত্রা যদি খুব বেশি না হয়, তবে নিজে নিজে তা নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টাও করতে পারেন নিম্নোলিখিত উপায়েঃ

১। কোন বিষয়ে হীনমন্যতায় ভুগলে কিংবা উদ্বেগ কাজ করলে বন্ধু, ভাই-বোন কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলাপ করুন। এতে আপনার উদ্বেগ অনেকটাই কমবে, কাছের মানুষদের কথা থেকে পেতে পারেন সহজ সমাধানও।

২। কোনো বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ নেতিবাচক না ভেবে আপনার সময়, শক্তি ও মনোযোগ অন্য দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করুন। নিজের পছন্দের কাজগুলো এক্ষেত্রে হতে পারে দারুণ সহায়ক। সিনেমা দেখা, বই পড়া, ছবি আঁকা, ঘোরাঘুরি করা ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, মনের যত্ন নিন। পছন্দের কাজগুলো আপনাকে হাসিখুশি আর উচ্ছ্বল রাখতে সহায়তা করবে।

৪। ব্যস্ততা অনেক সময় অ্যাংজাইটির মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। যদি মনে হয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অ্যাংজাইটির মাত্রা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা অ্যাংজাইটি কমানোর একটি উপায় হতে পারে। শিখতে পারেন নতুন কিছু অথবা স্বেচ্ছাসেবী অর্গানাইজেশনগুলোর সাথে কাজ শুরু করতে পারেন। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি এই কাজগুলো আপনাকে অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করবে।

৫। চিকিৎসকদের মতে সাধারণ পর্যায়ের অ্যাংজাইটি কমিয়ে আনতে মেডিটেশন বেশ ভালো উপায়। নিয়মিত মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম শরীর ও মন উভয়ই সুস্থ রাখে। মনের বন্ধুর মেডিটেশন সম্পর্কিত ব্লগটি হতে পারে এই ব্যাপারে সহায়ক।

অ্যাংজাইটি আপনার মনের মাঝে বাসা বাঁধে, তবে দীর্ঘদিন এই সমস্যা থাকলে তা বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতিও সাধন করে। তাই দ্রুত এর চিকিৎসা করানো উচিত। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করান, মন খুলে জানান কী কারণে আপনি দুশ্চিন্তা বোধ করছেন। এক্ষেত্রে, মনের বন্ধুর কাউন্সেলিং সেবা আপনার মনের কথা শুনতে আর মনের সুস্থতা রক্ষায় সবসময়ই পাশে আছে।

ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিত

এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।

এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।

মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।

📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা

You might also like this

BLOG

কীভাবে সহমর্মী শ্রোতা হব?

আমরা অনেক সময় সামনে থাকা মানুষটির কথা থামিয়ে দিয়ে, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এ অভ্যাসটিও একজন ...

BLOG

ক্লাস শুরু হওয়ার আগে কেন এত টেনশন?

যখনই ঘোষণা এলো ক্লাস শুরু হওয়ার, তখনই তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যেতে শুরু হলো। ভর্তি পরীক্ষার পর থেকে আর বই নিয়ে বসা হয়নি। তার উপর ...

BLOG

কেন আমরা কাজ ফেলে রাখি?

রুমের কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারটিতে কাপড়ের স্তুপ জমে জমে ছোটোখাটো একটা এভারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন একদম চলেই এসেছে, তবু এখনো ...

BLOG

মেডিটেশন কি সত্যিই জরুরি?

“আরাম করে বসি। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করি। সমস্ত মনোযোগ নিয়ে আসি নাকের প্রতি। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেই এবং ধীরে ধীরে ...