ক্লাস শুরু হওয়ার আগে কেন এত টেনশন?

এশনা বিনতে আলী

MENTAL HEALTH

ঘটনা ১ঃ দীর্ঘদিন সেমিস্টার ব্রেকের পর আবার ক্লাস শুরু হবে শায়লার (ছদ্মনাম)। ছুটিটা বেশ আনন্দেই কাটিয়েছে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো ছুটির শেষ দিকে এসে। এক প্রবল অস্থিরতা পেয়ে বসলো তাকে। বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাসরুম, সহপাঠীরা কোন কিছুই তো তার কাছে নতুন নয়। তবু আবার ক্লাস শুরু হবে মনে হলেই কেন যেন এক ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করছে সে ।

ঘটনা ২ঃ এইচএসসি পরীক্ষার সময় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় কেটেছে রায়হানের (ছদ্মনাম)। একেবারেই দম ফেলার সুযোগ ছিলো না। এরপর যখন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলো, জীবনে ফিরে এলো স্বস্তি। কিন্তু যখনই ঘোষণা এলো ক্লাস শুরু হওয়ার, তখনই তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যেতে শুরু হলো। ভর্তি পরীক্ষার পর থেকে আর বই নিয়ে বসা হয়নি। তার উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পড়া। এতদিন বাড়ির কাছের স্কুল কলেজে, পড়াশোনা করেছে। সহপাঠী, শিক্ষক সকলেই ছিলো পরিচিত মুখ। এখন হুট করে নতুন জায়গায়, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার মতো সাহস সে সঞ্চার করতে হিমশিম খাচ্ছে।

এইচএসসি পরীক্ষার সময় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত উপরের শায়লা বা রায়হানের মতো পরিস্থিতি অনেক শিক্ষার্থীরই হতে পারে। তবে এমন সমস্যা নিয়ে আমরা তেমন কথা বলি না। অনেকটা লুকিয়ে, নিজের মাঝে মানসিক চাপ ও উদ্বেগকে চেপে রাখি আমরা। তাতে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়া আরো কঠিন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়। তাই নতুন সেমিস্টার শুরু করা কিংবা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেওয়া শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভালো। ক্লাস শুরুর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য মনের বন্ধু জানাচ্ছে কিছু সহজ উপায়ঃ

"অনেকটা লুকিয়ে, নিজের মাঝে মানসিক চাপ ও উদ্বেগকে চেপে রাখি আমরা। তাতে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়া আরো কঠিন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে হয়।"

নির্দিষ্ট রুটিন তৈরী করা

দীর্ঘদিন ছুটি পেলে দেখা যায় ঘুম ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন হয় অনেকের। এতে ক্লাস শুরু হলে ভোগান্তিতে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। তাই সর্বপ্রথম প্রস্তুতি হিসেবে নিয়মমাফিক ঘুম ও খাওয়ার অভ্যাসটা করে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে, ঘুমের আগে যেকোন ধরণের ডিভাইস দূরে রাখা সহায়ক হতে পারে।

অভ্যাসের চর্চা

ক্লাস শুরু হলে আবার পড়তে বসতে হবে - এই ভয়ও অনেক সময় প্রবল মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। দীর্ঘ ছুটির পর আবার পড়ায় মনোনিবেশ করাও কঠিন মনে হতে পারে। এজন্য নিয়মিত মাইন্ডফুল হবার অর্থাৎ মনোযোগ বাড়ানোর চর্চা করতে হবে। শুধু ফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত না রেখে ছুটিতে আপনি বই পড়তে পারেন, মেডিটেশন শুরু করতে পারেন অথবা যেতে পারেন এমন কোনো জায়গায় যা আপনাকে জীবনে সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা দিবে। মাইন্ডফুলনেস বা মনোযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আপনি নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পরামর্শ চাইতে পারেন মনের বন্ধু’র কাউন্সেলরদের কাছেও।

বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ

যারা পরিবার থেকে দূরের কোনো শহরে পড়ালেখা করেন, তারা সাধারণত ছুটিতে পরিবারের কাছে ফেরত যান। এই ছুটি কাটানো, প্রিয় মানুষদের কাছে ফেরার অভ্যাসটি আমাদের মানসিক সুস্থতা ও প্রশান্তির জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। তবে ক্লাস শুরু হবার পর আবার তাদের রেখে শহরে পাড়ি জমানোর বাধ্যবাধকতাও অনেকের বিষন্নতার কারণ হতে পারে। তাই নিজেকে একাকী মনে না করে ছুটিতেও সহপাঠী, বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত। নতুন সেমিস্টারের কোর্স নিয়ে আলোচনা করলে, ছুটিতে কী করছেন তা নিয়ে আড্ডা দিলে তাদের সাথেও বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়, আবার পরবর্তীতে একাকীত্ববোধও দূর হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন আয়োজনে বা ক্লাবের সাথে যুক্ত থাকলে জায়গাটি আপন করে নেয়া আরো সহজ হয়।

মনের কথা খুলে বলা

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে আমরা অনেক সময় একার চেষ্টায় এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারি না। এক্ষেত্রে অবশ্যই পরিবারের সদস্য বা কাছের বন্ধুর সাথে খোলামেলা আলাপ করতে হবে। ক্লাস শুরুর আগে বড় ভাই-বোনের থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে, জেনে নিতে পারেন তারা কীভাবে এই সময়টা পার করেছিলো। প্রয়োজনে এ বিষয়ে কাউন্সলেরের সাথে কথা বলুন। কেননা নতুনকে নিয়ে আমাদের এই উদ্বেগ, দুশ্চিন্তার সাথে মানসিক স্বাস্থ্য ভীষণ সম্পর্কিত। ভুলে যাবেন না, মনের বন্ধু সবসময় আছে আপনার পাশে।

এখনই তো সময় নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার, নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার। তাই এই সময়টাতে জীবনের নতুন অধ্যায় নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন আমি এমন অনুভব করছি? উদ্বেগটা ঠিক কীসের? সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারলেই দেখবেন মানসিক চাপ অনেকটুকুই কমে এসেছে। তারপর পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, নিজ উদ্যোগ ও মনের বন্ধু’র কাউন্সেলেরদের পরামর্শ নিয়ে জীবনকে করে তুলুন আরো সহজ ও সুন্দর। শুভ হোক আপনার পথচলা!

ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিত

এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।

এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।

মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।

📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা

You might also like this

BLOG

কীভাবে সহমর্মী শ্রোতা হব?

আমরা অনেক সময় সামনে থাকা মানুষটির কথা থামিয়ে দিয়ে, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এ অভ্যাসটিও একজন ...

BLOG

কেন আমরা কাজ ফেলে রাখি?

রুমের কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারটিতে কাপড়ের স্তুপ জমে জমে ছোটোখাটো একটা এভারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন একদম চলেই এসেছে, তবু এখনো ...

BLOG

মেডিটেশন কি সত্যিই জরুরি?

“আরাম করে বসি। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করি। সমস্ত মনোযোগ নিয়ে আসি নাকের প্রতি। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেই এবং ধীরে ধীরে ...

BLOG

মন খারাপই কি ডিপ্রেশন?

আমাদের মন কত-শত কারণেই না খারাপ হয়! প্রিয় বন্ধু্র সাথে ঝগড়া হলে, পছন্দের বইটি হারিয়ে গেলে, পরীক্ষায় খারাপ করলে আমরা বলি ‘মনটা খুব খারাপ’। কিন্তু মন খারাপ মানেই কি আমি বিষন্নতায় ...