সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে তাল মেলাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের হার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক,ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক, টেলিগ্রাম ইত্যাদি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের নিমিষেই পুরো বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করছে। যে বন্ধুর সাথে বছরের পর বছর দেখা হয়নি, কথা হয়নি, সে বন্ধু কোথায় কী করছে, কেমন আছে – তাও জানা যাচ্ছে ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামে সংযুক্ত থাকার কারণে।
সামাজিক মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয়তা শুধু তরুণদেরই নয় প্রভাবিত করছে কিশোর কিংবা মধ্যবয়স্কদেরও। তবে এই মাধ্যমগুলোর যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে সেই সাথে রয়েছে নেতিবাচক প্রভাবও। অনেকের কাছেই সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে আসক্তির মতো। একটু পরপর ফেসবুক স্ক্রল করা, ইন্সটাগ্রামে নোটিফিকেশন চেক করতে উঁকি দেয়া, টিকটকে একের পর এক ভিডিও দেখে যাওয়ার মতো অভ্যাস প্রায়ই দৈনন্দিন কাজের ব্যাঘাত ঘটায় ও মনোযোগের ঘাটতির কারণ হয়। রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করাও আজকাল কিশোর-তরুণদের কাছে একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, যা শারীরিক ও মানসিক স্থিতিকে সহজেই ব্যহত করতে পারে। অনেকেই আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে কিছু করতে দেখে, রেস্তোরাঁয় খেতে দেখে, কোথাও বেড়াতে যেতে দেখে, প্রবল ঈর্ষায় ভোগেন। এ থেকেও সৃষ্টি হয় প্রবল মানসিক চাপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা বেশিরভাগই এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই মনের বন্ধু’র আজকের লেখায় আমরা জানাচ্ছি সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে আপনার মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দূর-দূরান্তের বন্ধুদের সাথে সহজে যুক্ত হতে পারছি ঠিকই, তবে সেইসাথে অর্ধ পরিচিত, অপরিচিত ও স্বল্প পরিচিত অনেকের জীবন-যাপনও দেখতে পাচ্ছি এখানেই। সোশ্যাল মিডিয়াকে বলা যায় ‘ভালো সময়ের ডায়েরি’। এখানে মানুষ সাধারণত তার জীবনের সুন্দর কোনো বিষয়, হাসি-আনন্দের মূহুর্তগুলোই শেয়ার করে। কেউ হয়তো চাকরি পেয়ে পোস্ট দেন, কেউ আবার জানান নতুন বিয়ের খবর। তবে এ ধরনের আপডেট বা পোস্ট অনেকেরই হীনমন্যতা বাড়িয়ে দেয়। অন্যের বেড়াতে যাওয়ার ছবি দেখে নিজের অপ্রাপ্তির ব্যাপারগুলো মনে পড়ে যায়। কেন আমারও এমন হলো না - ধরনের চিন্তা মানুষের আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়, মানসিক শান্তি নষ্ট করে।
সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের বাস্তবতা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের সাজানো গোছানো জীবন আমাদের মনে এক ধরণের প্রভাব ফেলে যে আমাদেরও ঠিক এরকমই পরিপাটি থাকতে হবে। অন্যের সাথে তাল মিলিয়ে ছবি আপলোড, স্ট্যাটাস আপডেট দিতে গিয়ে বাস্তব জীবন থেকে সরে গিয়ে নিজেকে একটি খোলসে আবদ্ধ করে ফেলে মানুষ। এ ধরনের চিন্তা থেকে যখনই দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা ‘এডিটেড’, ‘রেকর্ডেড’, ‘ফিল্টার্ড’ চিত্রের সাথে বাস্তব জীবন মিলছে না,তখন অনেকে অবসাদ ও মানসিক চাপে ভোগে।
সোশ্যাল মিডিয়া বা ডিজিটাল স্পেসের অনেক ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি সাইবারবুলিং এর অন্ধকার ছায়াও সেখানে ভয়ানক প্রভাব ফেলে। কিশোর-তরুণরাই সাইবারবুলিংয়ের শিকার বেশি হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ আইসিটি ডেভেলপমেন্টের এক জরিপে দেখা যায়, সাইবারবুলিং বা অনলাইনে হয়রানির ৮০ ভাগ ভুক্তভোগী নারী। অযাচিত মন্তব্য কিংবা বার্তা, বিভিন্ন ঘটনায় ভার্চুয়াল তর্কে জড়িয়ে পড়া, প্রাইভেসি ভঙ্গ করা ইত্যাদি প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার মানসিক উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম যেন দিন শেষে আমাদের অনেকের জন্যই মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এর সঠিক ব্যবহার আমাদের জানতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আসক্তি থাকলে সেটি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা খুবই জরুরি। ২০১৮ সালের পেনিসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় জানা দেখা যায়, দিনে যতটা সময় আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাই তার থেকে ৩০ মিনিট করে হ্রাস করলেই বিষন্নতা, উদ্ব্যেগ ইত্যাদি সমস্যা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠা সম্ভব। সেক্ষেত্রে সহজ যে কয়টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে-
১। দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময় নিজের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন। বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, অফিসের কাজে, খেলাধূলার সময়, পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে মুঠোফোন কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখুন।
২। মুঠোফোন কিংবা যেকোন ডিভাইস নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া বন্ধ করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে বই পড়ুন বা গান শুনুন। ঘুমের আগে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং করলেও মানসিক চাপ বাড়তে পারে।
৩। সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি দূর করার আরেকটি উপায় হলো সকল ধরণের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়া। এতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। কেননা তখন আর আপনি নোটিফিকেশনের আওয়াজ শুনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছুটে যাবেন না, বরং আপনি এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন কিনা – সেই সিদ্ধান্তটি থাকবে আপনার হাতেই।
৪। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াও রাখুন পরিচ্ছন্ন। অপরিচিত কাউকে সংযুক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। অযাচিত পেইজ, গ্রুপ, পোস্ট যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৫। চাইলে কিছুদিনের জন্য সকল ধরণের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন মুঠোফোন থেকে ডিলিট করে দিন। একান্তই প্রয়োজন ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে সেসময় বিরত রাখুন। এ সময়টি আপনার জন্য ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ হিসেবে কাজ করবে।
অনেক সময় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা আমরা নিজেরা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারি না। ঠিক কোন কারণে বিষণ্ণ কিংবা কোন কারণে উদ্বেগ হচ্ছে এগুলো নিজেরাই জানি না। তাই সামাজিক মাধ্যম হোক বা অন্য কোনো কারণে যদি আপনি মানসিক চাপে ভোগেন, তবে মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত অতি দ্রুত। মনের বন্ধুতে এসেও আপনি জানাতে পারেন আপনার মানসিক উদ্বেগের কথা, আমাদের কাউন্সেলরদের সাথে কথা বলে জেনে নিন আপনার মানসিক চাপের কারণ সত্যিই মানসিক চাপ কিনা। আপনার মনের কথা শুনতে মনের বন্ধু সবসময় আপনার পাশেই রয়েছে!
এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।
📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা
আমরা অনেক সময় সামনে থাকা মানুষটির কথা থামিয়ে দিয়ে, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এ অভ্যাসটিও একজন ...
যখনই ঘোষণা এলো ক্লাস শুরু হওয়ার, তখনই তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যেতে শুরু হলো। ভর্তি পরীক্ষার পর থেকে আর বই নিয়ে বসা হয়নি। তার উপর ...
রুমের কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারটিতে কাপড়ের স্তুপ জমে জমে ছোটোখাটো একটা এভারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন একদম চলেই এসেছে, তবু এখনো ...
“আরাম করে বসি। ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করি। সমস্ত মনোযোগ নিয়ে আসি নাকের প্রতি। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেই এবং ধীরে ধীরে ...