খুব অল্প সময়ের ভেতরে একটা রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন বস। রিপোর্টটা ভালো হোক, আমিও চাই। তথ্যও সব সংগ্রহ করা আছে। সবকিছু গুছিয়ে আমি যখন লিখতে যাব, খেয়াল করলাম ল্যাপটপ কোনো ভাবেই কাজ করছে না। কাগজ কলম নিয়ে বসলাম, কিন্তু আঙুল গলে যেন হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল কলম, হুট করেই যেন মনে হলো, আচ্ছা আমি কি পঙ্গু হয়ে গেলাম? আমি কি কোনো দিন-ই লিখতে পারব না? আমার জীবনটা কি তবে শেষ হয়ে যাচ্ছে? 

এই যে অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, এত চাপ, অর্থাৎ আমার চাওয়া এবং আমার সম্পদের ভেতর একটা পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আর একটু সহজে বললে বলা যায় আমি যা করতে চাই আর আমি যা করি এর মাঝে অসামঞ্জস্যতার ফলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাই হলো চাপ। 

চাপের কতগুলো লক্ষণ আমাদের শরীর, মন, চিন্তা এবং আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

• আমরা একই বিষয় নিয়ে বারবার নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকি 
• আমরা একটুতেই খুব রেগে যাই
• মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় 
• আমাদের ঘুমের রুটিনে বাজে প্রভাব দেখা যায়
• অনেক সময় আমরা অনেক বেশি খেয়ে ফেলি, আবার অনেক সময় খাবার খেতে ইচ্ছা করে না
• আমরা অন্য আরেকজনের কাজ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করি 
• খুব অল্পতেই আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি 
• আমরা খুব অস্থির এবং উদ্বেল অনুভব করি 
• শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ক্লান্তি অনুভব করি 
• নার্ভাস আচরণ যেমন দাঁত দিয়ে নখ কাটা অথবা অবচেতনভাবে মাথার চুল ছেঁড়ার মতো কাজ করে থাকি 
• মনোযোগ কমে যায় ফলে আমরা কাজে অবহেলা করি 
• সব সময় খুব নার্ভাসবোধ করি, মানুষের সামনে যেতে ইচ্ছা করে না 
• একাকিত্ব অনুভব করি 

এ সকল লক্ষণগুলো দেখা দিলে আমাদের মনে চাপের পরিমাণ কত সেটা পরিমাপ করা যাবে। এটা জানাও জরুরি। নিচের লিংকের এই খেলাটা খেলার মাধ্যমে আমরা দেখে নিতে পারি আমাদের চাপ কোন মাত্রায় আছে। https://forms.monerbondhu.com/

আমাদের চাপ যে মাত্রাতেই থাকুক না কেন চাইলেই আমরা সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারি। চাপ ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়

• স্বল্পমেয়াদি কৌশল
• দীর্ঘমেয়াদি কৌশল 

স্বল্পমেয়াদি কৌশল 

• এ কৌশলগুলো খুব সহজে আয়ত্তে আনা যায় এবং এর সুবিধা হলো খুব দ্রুত চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় নিচের কৌশলগুলো অনুশীলন করার মাধ্যমে। 
• শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা 
• দ্রুত মেডিটেশন করা 
• পছন্দের কোনো কাজ করা 
• কাছে কোথাও থেকে হেঁটে আসা 
• প্রিয় কারও সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করা 
• পিএমআর (প্রোগ্রেসিভ মাসকুলার রিলাক্সজেশন) প্র্যাকটিস করা 

দীর্ঘমেয়াদি কৌশল

• দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগুলো আমাদের অভ্যাস, যা নিয়মিত অনুশীলন করার মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পারি। এই অভ্যাসগুলো আমাদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো থাকতে সহায়তা করে। 
• স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের অভ্যাস করা 
• প্রতিদিন কিছু সময় রাখা যখন আপনি নিজের পছন্দের কাজ করতে পারেন 
• ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করা 
• ইয়োগা এবং শারীরিক ব্যায়াম করা 
• প্রতিদিন কী করবেন না করবেন সেই লিস্ট অনুসরণ করা 
• সব শেষে বলা যায়, চাপমুক্ত জীবন যাপনের জন্য আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারি। এ বিষয়ে মনের বন্ধু’র সঙ্গেও করতে পারেন পরামর্শ।

মনের যত্ন ও সুস্থতা বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন আমাদের সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলরদের সঙ্গে। আপনার জন্য অসংখ্য শুভ কামনা!