সোনিয়া আক্তার পুষ্প
পড়ন্ত বিকেল। জানালায় বাইরে আকাশ দেখতে দেখতে হঠাৎ হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। পাশাপাশি শুরু হলো শ্বাস নেওয়ার কষ্ট, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ঘামা, কাঁপুনি দেওয়া, শরীর অসাড় হওয়া, মাথা ঘোরা এবং ভয় লাগা। একজন ব্যক্তির মধ্যে একই সঙ্গে মানসিক ও শারীরিক এই লক্ষ্মণগুলো যখন দেখা যায় এবং সে যখন নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, সেটাকে প্যানিক অ্যাটাক বলে। শারীরিকভাবে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা গেলেও এটি একটি মানসিক রোগ। প্যানিক অ্যাটাক যে কারও যে কোনো সময় হতে পারে। যে কারও জন্য প্যানিক অ্যাটাক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।
ছবিঃ প্যানিক অ্যাটাক সোর্সঃ ফ্রিপিক
প্যানিক ডিসঅর্ডার ও প্যানিক অ্যাটাক একই বিষয় নয়। প্যানিক ডিসঅর্ডারে বারবার প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে। ভবিষ্যতে আরও অনেক আক্রমণ হওয়ার একটি ক্রমাগত ভয় থাকে। সাধারণত যেসব ঘটনা প্যানিক অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে অথবা বিগত দিনের প্যানিক অ্যাটাকগুলোকে মনে করিয়ে দিতে পারে, ব্যক্তি সেগুলোকে এড়িয়ে যেতে থাকে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন জীবনে কোনো না কোনো সময়ে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হন। অনেকের একবার প্যানিক অ্যাটাক হলে পরবর্তীতে আর হয় না। অনেকের বারবার প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাকের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু কারণ হলো
আসুন জেনে নিই, প্যানিক অ্যাটাক হলে কীভাবে সহায়তা করতে পারি
১। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শান্ত থাকা
প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষ্মণের সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা করা চাইতে কোনো নিরাপদ বা আরামদায়ক জায়গায় অবস্থান করতে পারলে ভালো হয়। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। প্রয়োজনে পানি পান করা ও চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া যেতে পারে, এতে স্বায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তা কমে শরীর শান্ত হয়। সাধারণত প্যানিক অ্যাটাকের স্থায়িত্ব ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এরপর শারীরিক প্রতিক্রিয়া কমতে থাকে। চিকিৎসকেরা জানান, প্যানিক অ্যাটাককে ভয়াবহ মনে হলেও শরীরের ক্ষতি হয় না।
২। ইতিবাচক চিন্তা করা
এই সমস্যা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। গুরুতর কিছুই হবে না, এটা নিজেকেই বোঝাতে হবে। এতে মৃত্যুর কোনো আশঙ্কা নেই। কিছুক্ষণ পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। প্রতি মুহূর্তেই নিজেকে বোঝান যে আপনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন, এভাবে ইতিবাচক চিন্তা করার মাধ্যমে স্বস্তি পেতে পারেন।
৩। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
যখন প্যানিক অ্যাটাক হবে, তখন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এতে মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছালে ভয়ের তীব্রতা কমে যাবে। চাইলে প্রতিদিন নিয়ম করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। চলুন, শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামটি করা যাক: একটা হাত আপনার পেটের ওপর রাখুন, এবার নাক দিয়ে ধীরে ধীরে ৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে শ্বাস নিন এবং ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে মুখ দিয়ে প্রশ্বাস ছাড়ুন। মনে করুন, যখন শ্বাস নিচ্ছেন আপনার পেট বেলুনের মতো ফুলে উঠছে এবং যখন শ্বাস ছাড়ছেন বেলুন থেকে ধীরে ধীরে বাতাস বের হচ্ছে। এভাবে ৫/৬ বার শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামটি করতে পারেন।
৪। মাংস পেশির শিথিলায়ন
প্যানিক অ্যাটাকের সময় বেশির ভাগ ব্যক্তির মনে হয় শরীরের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। মাংসপেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে শিথিলায়ন করলে শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবেন। যেমন: ২ হাত শক্ত করুন, তারপর ৫ পর্যন্ত গুনে হাত ছেড়ে দিন, আবার শক্ত করুন। এবার এক এক করে একই কাজ কাঁধ, ঘাড়, পেট আর পা দিয়ে করতে পারেন।
ছবিঃ প্যানিক অ্যাটাক সোর্সঃ ফ্রিপিক
৫। মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করা
যখনই মনে হবে প্যানিক অ্যাটাক হতে চলেছে, ওপরে উল্লিখিত কাজগুলোর পাশাপাশি নিজের মনোযোগ সরিয়ে নিন। পছন্দের কোনো গান গাওয়া অথবা পাশে কেউ থাকলে তার সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। ছোটবেলার কোনো ভালো স্মৃতি মনে করা যেতে পারে, আশপাশে কী ঘটছে মনোযোগ দিয়ে দেখা যেতে পারে, ফ্লোরের টাইলস গোনার মতো কাজগুলো করা যেতে পারে ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে গ্রাউন্ডিং পদ্ধতি বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতিটি হলো: ৫-৪-৩-২-১ এভাবে হয়। অর্থাৎ খেয়াল করে আশপাশে পাঁচটি বস্তু দেখা? তারপর চারটি জিনিস স্পর্শ করা? তারপর কাছের বা দূরের তিনটি শব্দ শুনতে পারা? এরপর কোনো দুটি জিনিসের গন্ধ নেওয়া? সর্বশেষ হলো কোনোটির স্বাদ নেওয়া? এভাবে একে একে বর্তমানে মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির ভয়ের অনুভূতি থেকে দূরে সরে আসা যায়।
৬। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। অতিরিক্ত চা-কফি পান করা, ধূমপান, মদ্যপান করা একবারেই চলবে না। এগুলো মেনে চললে উপকারই পাবেন।
৭। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
প্রথমবারের প্যানিক অ্যাটাক বিপজ্জনক নয়। এমনকি এরপরও মাঝেমধ্যে প্যানিক অ্যাটাক হলে ভয়ের কিছু নেই।’ কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যদি কেউ প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে আচার-আচরণে বা জীবনযাপনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আনেন। যদি পরিস্থিতি বেশি খারাপ মনে হয়, ঘনঘন প্যানিক অ্যাটাক হলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নেওয়াই উত্তম।
মনে রাখুন
উল্লিখিত বিষয়গুলো নিজের ওপর কাজ না করলে পেশাগত পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় মনের বন্ধু আছে আপনার পাশে।
ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিত
এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।
📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা
আমাদের জীবনের চলার পথ র্যাম্পে হাঁটার পথের মতো মসৃণ হয় না। অর্থাৎ আমরা সব সময় মসৃণ পথ পাই না, আবার সব জুতা পরে সব রাস্তায় হাঁটাও যায় না। অমসৃণ, কর্দমাক্ত ও অসমতল পথ হলে অনেক সময় জুতা হাতে করেও হাঁটতে
অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। সুস্থতার জন্য এটি অপরিহার্য। আমাদের ভালো থাকা অনেকাংশে ঘুমের ওপর নির্ভর করে। একইভাবে যখন আমরা ভালো থাকি, ঘুমও ভালো হয়।
Mental stress is our emotional and psychological response when we feel overwhelmed, pressured, or threatened by challenging situations.
আমরা অনেকেই প্রোক্র্যাস্টিনেশন বা গড়িমসির ফলে বছরের শুরুতে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে পারি না। এতে মনে এক রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। লক্ষ্য পূরণের দৃঢ় মনোভাবটা আ