মোহাঃ বারিউল ইসলাম
আয়ান (ছদ্মনাম) সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তার মায়ের ছিল তীব্র মনোযোগ-যে কোনো কিছু একটু নোংরা বা এলোমেলো দেখলেই তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। সেই অভ্যাস, সেই চিন্তাগুলোই আয়ানের মাঝে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।
পরিচ্ছন্নতার চাপে মানসিক বন্দিত্ব
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠার পর থেকেই আয়ানের জন্য সমস্যা শুরু হয়। বাসায় সে যেসব জিনিস ব্যবহার করত, সেগুলো তার নিয়ন্ত্রণে থাকত। কিন্তু হলে বাথরুম ব্যবহার করতে হবে অনেকের সঙ্গে। সবকিছু তার মনমতো পরিষ্কার না থাকায় সে মানসিকভাবে অস্বস্তিতে পড়ে।
ওয়াশ রুমে গেলেই তার মনে হয়, নোংরা পানি শরীরে লেগে গেছে। এরপর হাত দিয়ে নাক, চোখ বা মুখ স্পর্শ করলে মনে হয় নোংরাটা শরীর থেকে মুখের ভেতরে চলে যাচ্ছে এবং সে ভয় পায় যে এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন শুরু হয় তার একটানা হাত ধোয়া, শরীর ধোয়ার প্রক্রিয়া। একেকবার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ওয়াশ রুমেই কেটে যায় শুধু ধোয়া আর ধোয়ার চেষ্টায়।
কিন্তু তাতেও তার মনের অস্বস্তি যায় না। রুমে ফিরে সে ভাবে হাত বা পায়ের আঙুলের ফাঁকে ভালোভাবে পরিষ্কার হয়নি। তখন মনে হয় বিছানা, বই, খাতা, সবকিছু নোংরা হয়ে গেছে। এরপর শুরু হয় আরেক দফা পরিষ্কারের যুদ্ধ।
একাকিত্ব, ক্লান্তি আর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া
এই অস্থিরতা এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে আয়ান দিনে একবারের বেশি ওয়াশ রুমে যেতে চায় না। তাই সে খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয়, বাইরে যায় না, ক্লাসে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। দিন দিন তার অসুস্থতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সে হল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যায় এবং বাইরের দুনিয়া থেকে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নেয়। বারবার ফিরে আসা এই চিন্তা ও আচরণগুলো থেকে মুক্তি পেতে না পেরে সে আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করে।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় আয়ানের এই অবস্থার নাম: Obsessive Compulsive Disorder (OCD)
এখানে তার "নোংরা বা অপবিত্র হয়ে পড়া" নিয়ে চিন্তাগুলোকে বলা হয় অবসেশন (Obsession), আর এই চিন্তার প্রতিক্রিয়ায় যে আচরণ-যেমন বারবার হাত ধোয়া, দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করা-সেগুলোকে বলা হয় কম্পালশন (Compulsion)। ওসিডি-তে ব্যক্তি জানে তার চিন্তাগুলো অযৌক্তিক, কিন্তু তবুও সেগুলোকে থামাতে পারে না।
ওসিডি নাকি মাইন্ড গেম?
ধরুন, আপনি প্রচণ্ড শীতের সকালে পুকুরে নামলেন। পানি এত ঠান্ডা যে হাত-পা কাঁপতে থাকে, মনে হয় শরীর জমে যাচ্ছে। আপনার শরীর আপনাকে জানাচ্ছে পুকুর থেকে উঠে আসার জন্য। কিন্তু আপনি উঠে এলেন না। ১০ মিনিট পর দেখবেন সেই ঠান্ডা অনুভূতিটা আর আগের মতো তীব্র নয়। তাহলে কি পুকুরের পানি গরম হয়ে গেছে?
না, পানি গরম হয়নি-আপনার শরীর মানিয়ে নিয়েছে। মস্তিষ্ক প্রথমে ভয় পায়, কিন্তু পরে যখন দেখে আপনি উঠে যাচ্ছেন না, তখন ধীরে ধীরে নতুন বাস্তবতাকে গ্রহণ করে নেয়।
ওসিডি অনেকটা এমনই। ধরুন, আপনার মস্তিষ্ক বলছে-“তোমার হাত নোংরা হয়ে গেছে, ধুয়ে ফেলো। ” আপনি যখন তার কথায় হাত ধুয়ে ফেললেন, তখন মস্তিষ্ক বুঝল, “আমি যা বললাম, তুমি করেছ”-এতে সে পুরস্কার পেল। কয়েকবার এমন হলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সেই আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
কিন্তু পুরস্কারের প্রতি অভ্যস্ত ব্রেন এক সময় এক-দুইবার হাত ধোওয়ায় আর সন্তুষ্ট থাকে না। তখন বাড়তে থাকে দাবি-৩ বার, ৫ বার, ১০ বার...এইভাবে চলতে থাকে চক্র। আপনার প্রতিটি কাজ যেটা বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়, মস্তিষ্ককে আরও বেশি চাহিদা তৈরি করতে সহায়তা করে। কারণ মস্তিষ্ক বারবার একই জিনিসে অভ্যস্ত হতে চায় না-সে খোঁজে নতুন পুরস্কার, নতুন তৃপ্তি।
মুক্তির পথ
ওসিডির চিকিৎসা সম্ভব। মনোবৈজ্ঞানিক থেরাপির মধ্যে বিশেষভাবে কার্যকর হলো CBT (Cognitive Behavioral Therapy) এবং ERP (Exposure and Response Prevention)। একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সহায়তায় সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগী ধীরে ধীরে শেখে কীভাবে তার 'ওসিডি মাইন্ড'কে চ্যালেঞ্জ করতে হয় এবং নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে হয়।
আয়ানের মতো অনেক তরুণ-তরুণী এই মানসিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা, সহানুভূতি আর সঠিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা।
শেষ কথা
আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনি বা আপনার কাছের কেউ এমন চিন্তা ও আচরণে ভুগছেন, তবে দ্বিধা না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্ট) সহায়তা নিন। ওসিডি কোনো দুর্বলতা নয়-এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সময়মতো সহায়তা পেলে সুস্থ জীবন সম্ভব।
এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।
📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা
Mental stress is our emotional and psychological response when we feel overwhelmed, pressured, or threatened by challenging situations.
Though the era has moved on, the society of our country is still dark. I am saying this because almost all families in our country think “What is mental health again? What is depression?
In the bustling streets of Bangladesh, amidst the vibrant culture and rich traditions, lies a silent struggle that often goes unnoticed—the mental health challenges faced by Bangladeshi men. While the
নারীদের গোটা জীবন আসলে হরমোনের ওঠানামা দিয়ে ভীষণ প্রভাবিত। সেই কিশোরীকাল থেকে মধ্যবয়স অবধি, মাঝে প্রেগনেন্সি, সন্তান প্রসব, ব্রেস্ট ফিডিং -- নানা সময়ে, নানা রকমের হরমোনের ওঠানামা নারীর শরীর ও মনকে নান