মোহাঃ বারিউল ইসলাম
আসক্তি কথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। কেউ মাদকাসক্ত, কেউ গেমে আসক্ত, কেউ আবার পর্নো বা মোবাইলে। কিন্তু আসলে কী আমরা জানি, আসক্তি কীভাবে হয়? কেন কেউ এসব কাজগুলো শুরু করে আর থামাতে পারে না? এটা কী শুধু খারাপ অভ্যাস, নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো কারণ আছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে মন ও আবেগ কীভাবে কাজ করে।
শুরুটা হয় কীভাবে
আবেগময় ঝাঁকুনি বা মানসিক ধাক্কার কারণে আসক্তির শুরু হতে পারে। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোনো না কোনো কষ্টের সময় আসে। হতে পারে- প্রিয় কারও মৃত্যু, সম্পর্কের ভাঙন বা বিশ্বাসঘাতকতা, পরিবারে ঝগড়া বা দ্বন্দ্ব, চাকরির চাপ বা ব্যর্থতা, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল, অর্থনৈতিক সংকট, শারীরিক অসুস্থতা, অথবা ছোটবেলার কোনো মানসিক আঘাত ইত্যাদি।
এসব ঘটনাগুলো আমাদের মনে তৈরি করে একাকিত্ব, শূন্যতা, হতাশা, রাগ, ভয়, কষ্ট বা হতাশা। তখন মস্তিষ্ক খুঁজে ফেরে ‘তৎক্ষণাৎ স্বস্তি’। এই অনুভূতিগুলো এতটাই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে যে, মানুষ তা থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও মুক্তি পেতে চায়। এই মুক্তির আশায় কেউ গেম খেলতে শুরু করে, মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটায়, পর্নো দেখে বা মাস্টারবেট করে, মাদক গ্রহণ করে, জুয়া খেলে, বা আনন্দ পাবে এমন কিছুতে নিজেকে ডুবিয়ে দেয়। এসব কাজের সময় আমাদের মস্তিষ্ক থেকে "ডোপামিন" নামের এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়, যা আমাদের স্বল্প সময়ের জন্য ভালো লাগার অনুভূতি দেয়।
বারবার একই কাজ আসক্তির শুরু
যখন কেউ কষ্টের সময় একবার এই ‘ভালো লাগা’র অভিজ্ঞতা পায়, তখন মস্তিষ্ক এটা মনে রাখে। পরবর্তীতে আবার যখন সে একাকী বা হতাশ হয়ে পড়ে, তখন তার মস্তিষ্ক মনে করিয়ে দেয় শেষবার কী করাতে ভালো লেগেছিল? সেই কাজ করার জন্যই তখন মানসিকভাবে উৎসাহ পাওয়া যায়। এইভাবে ধীরে ধীরে একটা নির্ভরতা তৈরি হয়। মস্তিষ্ক একটা অভ্যাস তৈরি করে ফেলে, আপনাকে অগোচরেই জানিয়ে দেয় কষ্ট হলেও ওই কাজ করলেই ভালো লাগবে। এটাই ধীরে ধীরে আসক্তিতে রূপ নেয়।
আসক্তি শুধু অভ্যাস না, এটা একটা মানসিক অবস্থা
অনেকেই ভাবেন, "আসক্তি মানে খারাপ হওয়া, নিজেকে ঠিক রাখতে না পারা। " আসলে বিষয়টা এমন না। আসক্তি হলো—
- মনের একটা অস্থির অবস্থা
- আবেগ নিয়ন্ত্রণে না রাখা
- মস্তিষ্কের ‘ভালো লাগা’ খুঁজে বেড়ানো
- বাস্তব জীবনের যন্ত্রণাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা
- যার ফলে মানুষ একটা কল্পিত স্বস্তির জগতে নিজেকে আটকে ফেলে।
বাস্তব দৃশ্য কল্পনা করুন
একজন কিশোর, যার বাবা-মা প্রায়ই ঝগড়া করে। সে তার কষ্ট কাউকে বলতে পারে না। স্কুলেও হয়তো তাকে কেউ বুঝতে পারে না। তখন সে রাত জেগে গেম খেলতে শুরু করে। কারণ গেম খেললে সে অন্য একটা দুনিয়ায় ঢুকে যায়, যেখানে কেউ তাকে বকছে না, কেউ খারাপ বলছে না। ধীরে ধীরে গেমটাই তার একমাত্র স্বস্তির জায়গা হয়ে ওঠে। এভাবেই শুরু হয় তার আসক্তি।
এটা শুধু ব্যক্তির নয়, পরিবারেরও যুদ্ধ
যখন পরিবারের কেউ আসক্তিতে পড়ে, তখন শুধু সেই ব্যক্তি নয়, পুরো পরিবারই এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে। বাবা-মা ভাবেন, "আমার সন্তান কেন এমন হয়ে গেল? "ওকে তো আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে বড় করেছিলাম..."এই পরিস্থিতি অনেক সময় স্বপ্নভঙ্গের মতো অনুভূতি তৈরি করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আসক্তি কোনো অপরাধ নয়, বরং এটা চিকিৎসাযোগ্য এক মানসিক অবস্থা।
কীভাবে এই চক্র ভাঙা সম্ভব?
প্রথমেই বোঝা দরকার, আসক্তি হওয়ার পেছনে কারণ আছে। শুধু "বদঅভ্যাস" বললে হবে না। মনের কথা বলার জায়গা তৈরি করতে হবে, পরিবারে, সমাজে, বন্ধুত্বে। প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং বা পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে। সবচেয়ে জরুরি, আসক্তিতে ভোগা ব্যক্তির পাশে সহানুভূতির সঙ্গে দাঁড়ানো।
কেউ ইচ্ছা করে আসক্ত হয় না। কষ্ট, শূন্যতা বা অপূর্ণতা থেকে শুরু হয় আসক্তির যাত্রা। তাই আসক্তির গল্প মানে শুধু একজনের নয়-এটা আমাদের সবার গল্প। আসুন, দোষারোপ নয়-বোঝা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার মাধ্যমে আসক্তির চক্র ভাঙি। একসঙ্গে গড়ে তুলি সুস্থ, সচেতন ও আবেগবান এক সমাজ।
ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিতএই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।
📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা
Mental stress is our emotional and psychological response when we feel overwhelmed, pressured, or threatened by challenging situations.
Though the era has moved on, the society of our country is still dark. I am saying this because almost all families in our country think “What is mental health again? What is depression?
In the bustling streets of Bangladesh, amidst the vibrant culture and rich traditions, lies a silent struggle that often goes unnoticed—the mental health challenges faced by Bangladeshi men. While the
নারীদের গোটা জীবন আসলে হরমোনের ওঠানামা দিয়ে ভীষণ প্রভাবিত। সেই কিশোরীকাল থেকে মধ্যবয়স অবধি, মাঝে প্রেগনেন্সি, সন্তান প্রসব, ব্রেস্ট ফিডিং -- নানা সময়ে, নানা রকমের হরমোনের ওঠানামা নারীর শরীর ও মনকে নান