Student packages and discounts ongoing!

ছুটির দিনে মনের যত্ন: কেন, কীভাবে?

জাহিন যাইমাহ্ কবীর

SELF CARE TIPS & TRICKS

এই ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ‘ছুটি’ মানে মুক্তি, আনন্দ, বিশ্রাম! ছুটি শুনলেই মন ছুট লাগাতে চায় দূর তেপান্তরে! তবে অনেক সময়ই দেখা যায় ছুটির দিনেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দাওয়াতে, আপ্যায়নে, সামাজিকতায় আর আতিথেয়তায়। সেই সাথে হয়তো যোগ হয়েছে ঘর গোছানোর কাজ, জমিয়ে রাখা কাজের পাহাড়ের বোঝা। এসব করেই চোখের পলকেই শেষ হয়ে যায় ছুটির দিনগুলো, কিন্তু নিজের মন ও শরীরের যে বিশ্রাম পাওনা ছিলো, তা আর মেলে না।

তবে যত কিছুই করুন না কেন, সারা সপ্তাহের ক্লান্তি দূর করে নতুন সপ্তাহের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে ছুটির দিনগুলোতে মনের যত্ন নেয়া কিন্তু ভীষণ প্রয়োজন। নইলে ক্লান্ত শরীর-মন দুই’ই বিদ্রোহ করে বসতে পারে। ছুটির দিনে যদি যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে পারেন, পছন্দের কাজ গুলো করে নিজের মন ভালো করতে পারেন, তবে দেখবেন ছুটির পর ফিরে পেয়েছেন কাজের নতুন উদ্যম। ভাবছেন ছুটিতে কীভাবে নেবেন মনের যত্ন? মনের বন্ধু জানাচ্ছে সে কথাই!

"ছুটির দিনগুলোতে আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন – কী করলে আমার ভালো লাগবে?"

পর্যাপ্ত ঘুম

কর্মব্যস্ততার ফলে অনেক সময় সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনগুলোতেই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর সুযোগ হয়ে ওঠে না। সেই ক্ষেত্রে একটু বাড়তি ঘুমানোর জন্য কাজে লাগাতে পারেন ছুটির দিনগুলো। এতে কিছুটা হলেও হালকা অনুভব করবে মন। তবে তাই বলে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালেও কিন্তু চলবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছুটির দিনের অতিরিক্ত ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ বাড়ায়। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে ৫৬ শতাংশ। তার মানে বুঝতেই পারছেন, লম্বা ঘুম দিতে গিয়ে তা যেন আবার সকাল গড়িয়ে দুপুর না হয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

পরিবারের সঙ্গে আড্ডা

একসঙ্গে, একই বাসায় থাকার পরও সারা সপ্তাহে নিজেদের ব্যস্ততার কারণে পরিবারের মানুষদের খুব একটা সময় দেয়া হয়ে ওঠে না। তাই ছুটির দিনগুলোতে মনের যত্ন নিতে পরিবারের মানুষগুলোর সাথে একটু বাড়তি সময় কাটান। একই সঙ্গে খেতে বসুন, খাওয়ার সময় কিংবা পরে বসে মন খুলে আড্ডা দিন। এতে সারা সপ্তাহের ক্লান্তি নিমেষেই ভুলে যাবেন আপনি। যদি পরিবারের কোনো কোনো সদস্য দূরে থাকেন, তবে যেতে পারেন সেখানেও। তবে দাওয়াত বা এ ধরনের আয়োজন করলে তা এমন ভাবে করাই শ্রেয় যাতে আপনার বা পরিবারের অন্য কারো ওপর অনেক কাজের দায়িত্ব না পড়ে। সবাই মিলে ছোট্ট একটা আয়োজন করেই বসে যেতে পারেন আড্ডায়।

নিজেকে সময় দিন

মনের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো নিজেকে সময় দেয়া। হাজারটা কাজের বোঝা নিয়ে পুরো সপ্তাহে কতটুকু সময় আপনি শুধু নিজের জন্য রাখতে পারছেন তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? আমাদের অনেকেরই এমন সময় রাখার সুযোগটাই হয়ে ওঠে না। তাই ছুটির দিনে নিজেকে সময় দিন। পছন্দের কোনো গান শুনুন। পড়ার অভ্যাস থাকলে বই পড়ুন। দেখতে পারেন সিনেমা কিংবা নাটকও। মেডিটেশনও হতে পারে ছুটির দিনে নিজের সাথে সময় কাটানোর দারুণ উপায়। আপনার শখের কাজগুলোও কিন্তু প্রশান্ত করতে পারে মনকে। যদি বাগান করতে ভালোবাসেন, ছুটিতে গাছগুলোকে আরেকটু সময় দিন, যত্ন করুন। যদি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন, তবে রং-তুলি নিয়েও বসে যেতে পারেন।

আমরা অনেকেই ‘একা ছুটি কাটানো’কে ভালো চোখে দেখি না। ধরেই নেই, যিনি একা সময় কাটাচ্ছেন, তিনি খুব দুঃখী বা অসহায়। অথচ মনোবিজ্ঞান বলছে, নিজের সাথে কাটানো সময় আপনাকে নিজের মনের সাথে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে। নিজেকে সময় দিলে আমরা পরিচিত হতে পারি নিজের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলোর সাথে। এই অনুভূতিগুলো বুঝতে শেখা নিঃসন্দেহে আপনার মনের যত্নে ভীষণ জরুরি।

বন্ধু ও প্রিয় মানুষের সাথে কিছু সময়

সময়ের অভাবে বন্ধু বা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে আমাদের প্রায়ই দূরত্ব সৃষ্টি হয়, ভুল বোঝাবুঝি হয়। ছুটির দিন নিয়ে তাই একসাথে পরিকল্পনা করুন, কাটান কিছু সুন্দর মুহূর্ত। সময় কাটাতে যে খুব বেশি আয়োজন করতে হবে তা কিন্তু নয়। বিকেলে ছাদে বসে একটু গল্প করা, দুপুরে পুরোনো সিনেমা দেখা, রাতের খাবারে প্রিয় কিছু একসাথে রান্না করা – এসবই কিন্তু সুন্দর সময় কাটানোর উপায় হতে পারে।

এ সময় মোবাইল কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে একটু দূরে থেকে প্রিয় মানুষের সঙ্গ উপভোগ করুন। বাড়িতে আতিথেয়তার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন পুরো দিন আপ্যায়নেই চলে না যায়, নিজের বিশ্রাম ও স্বস্তির জন্য হাতে রাখুন কিছু সময়।

ঘুরে বেড়ানো

মনের যত্নে ঘুরে বেড়ানোর জুড়ি নেই। তাই ছুটির দিনগুলোতে সময় বুঝে একা, পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরে আসুন। বড় ছুটি হলে যেতে পারেন দূরের কোনো শহরে, গ্রামে, সমুদ্রে বা পাহাড়ে। ছোট ছুটি হলেও শহরের অন্য কোনো প্রান্তে, কোনো প্রদর্শনীতে বা আয়োজনে যেতে পারেন। নাগরিক জীবন থেকে একটুক্ষণের মুক্তি পেতে চাইলে যেতে পারেন শহর থেকে একটু দূরে লং ড্রাইভেও।

সময় দৌড়ায়, কিন্তু তারও আগে যেন দৌড়ায় ছুটির দিনগুলো। এই অল্প সময়কেই তাই কাজে লাগিয়ে যত্ন নিতে হবে মনের। সপ্তাহজুড়ে তো বাসা, অফিস অনেক কিছুই সামলানো হয়। তাই ছুটির দিনগুলোতে আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন – কী করলে আমার ভালো লাগবে?

ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিত

এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।

এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।

মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।

📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা

You might also like this

BLOG

কীভাবে সহমর্মী শ্রোতা হব?

আমরা অনেক সময় সামনে থাকা মানুষটির কথা থামিয়ে দিয়ে, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এ অভ্যাসটিও একজন সহমর্মী শ্রোতা হবার পথে বাধা।

BLOG

কেন আমরা কাজ ফেলে রাখি?

রুমের কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারটিতে কাপড়ের স্তুপ জমে জমে ছোটোখাটো একটা এভারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন একদম চলেই এসেছে, তবু এখনো শুরু করতে পারছি না। প্রায় প্রতিদিন যা করে এসেছি, যা আমার ন

BLOG

মেডিটেশন কি সত্যিই জরুরি?

দিনের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি মেডিটেশন করবার জন্য বেছে নিতে পারেন। হতে পারে তা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। আবার অনেক সময় কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করেও মেডিটেশন অনুশীলন

BLOG

আপনি কি অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন?

দুশ্চিন্তা তো কম-বেশি আমরা সবাই করি! তবে কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা বা উদ্বেগ স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বেগ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কারো দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘট