Student packages and discounts ongoing!

মেডিটেশন কি সত্যিই জরুরি?

কাজী রুমানা হক

MEDITATION TIPS & TRICKS

"আরাম করে বসি।
ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করি।
সমস্ত মনোযোগ নিয়ে আসি নাকের প্রতি।
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নেই এবং ধীরে ধীরে প্রশ্বাস ছাড়ি।
এবার চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে নিতে সমস্ত মনোযোগ নিয়ে আসি আমার নিজের শরীরের প্রতি……"

কম বেশি প্রায় সব মেডিটেশন শুরু হয় এই নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে। অর্থাৎ মেডিটেশনের শুরুতেই থাকে শরীর ও মনকে শিথিল করার কথা, শান্ত করার কথা। এ থেকেই বোঝা যায়, মেডিটেশন হলো এমন এক অনুশীলন যা আমাদের মনকে আরও বেশি সচেতন করে ও শান্ত করে। আমাদের মনকে বর্তমানের প্রতি কেন্দ্রীভূত করতেও সাহায্য করে এই পদ্ধতি। অনেক সময়ই আমাদের মন অশান্ত হয়, আমরা তীব্র অস্থিরতা অনুভব করি, কোনো কাজে মনোযোগ আসে না। এধরনের পরিস্থিতিতেও মেডিটেশন হতে পারে আপনার সঙ্গী। কেননা এর মাধ্যমে আমাদের চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে কোনোরকম জাজমেন্ট ছাড়া উপলব্ধি করার ও বোঝার অভ্যাস করতে পারি। এতে নিজের সম্পর্কে, নিজের অনুভূতিগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা জন্মায়, যা আপনাকে মানসিক শান্তি বা স্থিরতার দিকে নিয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, মেডিটেশন চর্চার বিষয়। নিয়মিত এর অনুশীলন করতে হয়। আপনি যখন নিয়মিত এ পদ্ধতির মাধ্যমে মনকে কেন্দ্রীভূত করবার চর্চা করবেন, আপনার মস্তিষ্কও দিনের এক নির্দিষ্ট সময়ে জীবনের শতেক জটিলতার কথা ভুলে আপনার অনুভূতিগুলো নিয়ে মনোযোগী হবার সিগন্যাল পায়।

মেডিটেশন বিভিন্ন ধরনের হয়। মনের বন্ধু’র লিড সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর হিসেবে কিছু মেডিটেশন সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানাচ্ছিঃ

১। মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন (Mindful Meditation) এই মেডিটেশনে আমাদের মনোযোগকে পুরোপুরি বর্তমানে ফোকাস করতে বলা হয়। বলা হয় কোনরকম জাজমেন্ট ছাড়া আমাদের সেনসরি অর্গান (Sensory organ) গুলোর মাধ্যমে বর্তমান সময়টাকে অনুভব করতে। অর্থাৎ এই মেডিটেশনে একটা জায়গায় বসে খেয়াল করতে হয় – আমরা চোখ দিয়ে কী কী দেখতে পাচ্ছি, কোন কোন শব্দ আমরা কান দিয়ে শুনতে পাচ্ছি, আমাদের নাকের সাহায্যে কোন কোন গন্ধ আমরা পাচ্ছি। এছাড়াও এ সময় উপলব্ধি করতে বলা হয়, আমাদের শরীরে আমরা কেমন তাপমাত্রা আমরা অনুভব করছি। সব শেষে, কোনো একটি খাবার মুখে দিয়ে জিহ্বায় তার স্বাদ কেমন পাচ্ছেন সেটিও খেয়াল করতে বলা হয়। এভাবেই আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে বর্তমানের দিকে আমাদের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করা, অনুভূতি সম্পর্কে নিজেদের সচেতনতা বাড়ানোই মাইন্ডফুল মেডিটেশনের কাজ।

২। গাইডেড মেডিটেশন (Guided Meditation): একজন গাইডের ইন্সট্রাকশন ফলো করে এই মেডিটেশনের চর্চা করতে হয়। গাইড মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করবে। , যেমন স্ট্রেস কমাতে বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে। এছাড়াও আরো আছে লাভিং-কাইন্ডনেস মেডিটেশন, ফরগিভনেস মেডিটেশন, পজিটিভ অ্যাফারমেশন ইত্যাদি। সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর বা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনি জেনে নিতে পারেন কোন ধরনের মেডিটেশন আপনার জন্য উপকারী হবে। এ বিষয়ে আপনি অবশ্যই মনের বন্ধু’র পরামর্শ নিতে পারেন।

৩। পোমোদোরো সিস্টেমঃ কাজে মনোযোগ না থাকাও অনেক সময় কাজের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে পোমোদোরো সিস্টেম (Pomodoro system) হতে পরে আপনার সমাধান। এ সিস্টেম অনুযায়ী, কাজের শুরুতে আপনাকে ২০-৩০ মিনিটের টাইমার সেট করে নিতে হবে। সেই সাথে ঠিক করে নিন, ২০-৩০ মিনিটের এই সময়সীমায় আপনি কতটুকু কাজ শেষ করবেন। একটানা সেই নির্দিষ্ট সময়টুকু কাজ করে ৫ মিনিটের বিরতি নিন। তারপর আবার ২০-৩০ মিনিটের টাইমার সেট করে কাজ শুরু করুন। যে অ্যাসাইনমেন্টটি কিছুতেই শুরু করতে পারছেন না, তার জন্যও এমন টাইমার সেট করে নিন। যখন দেখবেন ছোট ছোট পদক্ষেপে অ্যাসাইনমেন্টটি এগোচ্ছে, তখন আর এ নিয়ে তেমন মানসিক চাপ অনুভব করবেন না।

৪। কাউন্সেলিংঃ এছাড়াও অনেক সময় মানসিক অবস্থার কারণে, পারিপার্শ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে আমরা এতই বেশি উদ্বিগ্ন বা চাপ অনুভব করতে পারি, যা হয়তো একার চেষ্টায় সমাধান করে ফেলা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর সাহায্য নিন, কাউন্সেলিং নিন। কাউন্সেলিং সেবা নিয়ে মনের বন্ধু সবসময়ই আছে আপনাদের পাশে।

কখন মেডিটেশন করব?

দিনের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি মেডিটেশন করবার জন্য বেছে নিতে পারেন। হতে পারে তা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। আবার অনেক সময় কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করেও মেডিটেশন অনুশীলন করা যেতে পারে। এতে কাজের উদ্যম বাড়ে এবং প্রোডাক্টিভিটি বুস্ট হয়। এছাড়া আরও একটি ভালো সময় হলো, যেকোনো ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটির পর, পর মেডিটেশন করা। যেকোনো ইয়োগা বা ফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজের পর আমাদের শরীর এবং মনকে রিল্যাক্স করতেও মেডিটেশন খুব সাহায্য করে ।

কেন মেডিটেশন করব?

১. প্রায় সব মেডিটেশনে বলা হয় একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর মনোযোগ নিয়ে আসার কথা। এতে আমাদের মনোযোগ বাড়ে, আমরা মাইন্ডফুল হয়ে উঠি।

২. প্রায় সব মেডিটেশনে বলা হয় একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর মনোযোগ নিয়ে আসার কথা। এতে আমাদের মনোযোগ বাড়ে, আমরা মাইন্ডফুল হয়ে উঠি।

৩. মেডিটেশন অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের চিন্তা, অনুভূতি, বডি সেনশেসন বিষয়ে সচেতন হতে পারি খুব সহজে। আমাদের শরীর এবং মনের ভেতর সংযোগ বাড়াতেও সাহায্য করে মেডিটেশন।

৪. অনেক সময় আমাদের ঘুমের খুব অসুবিধা হয়। মেডিটেশন আমদের ভালো ঘুমের টনিক হিসেবে কাজ করে থাকে। নিয়মিত মেডিটেশন আমাদের শরীরের ক্রনিক ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, কেননা এর মাধ্যমে আমাদের শরীরের মাংশপেশি শিথিল ও রিল্যাক্সড হয়।

সব শেষে বলা যায়, মনের যত্ন নিতে যারা সত্যিই আগ্রহী, তাদের জন্য মেডিটেশন হতে পারে এক দারুণ উপায়। শুধু বুঝতে হবে দিনের কোন সময়টা, কোন ধরনের মেডিটেশন করলে আপনার ভালো লাগবে। এ বিষয়ে মনের বন্ধু’র সাথেও করতে পারেন পরামর্শ। মনের যত্ন ও সুস্থতা বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন আমাদের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলরদের সাথে। আপনার জন্য অসংখ্য শুভ কামনা!

ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিত

এই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।

এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।

মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।

📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা

You might also like this

BLOG

কীভাবে সহমর্মী শ্রোতা হব?

আমরা অনেক সময় সামনে থাকা মানুষটির কথা থামিয়ে দিয়ে, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এ অভ্যাসটিও একজন সহমর্মী শ্রোতা হবার পথে বাধা।

BLOG

কেন আমরা কাজ ফেলে রাখি?

রুমের কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারটিতে কাপড়ের স্তুপ জমে জমে ছোটোখাটো একটা এভারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন একদম চলেই এসেছে, তবু এখনো শুরু করতে পারছি না। প্রায় প্রতিদিন যা করে এসেছি, যা আমার ন

BLOG

ছুটির দিনে মনের যত্ন: কেন, কীভাবে?

এই ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ‘ছুটি’ মানে মুক্তি, আনন্দ, বিশ্রাম! ছুটি শুনলেই মন ছুট লাগাতে চায় দূর তেপান্তরে! তবে অনেক সময়ই দেখা যায় ছুটির দিনেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দাওয়াতে, আপ্যায়নে, সামাজিকতায় আর আতিথেয়তায়

BLOG

আপনি কি অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন?

দুশ্চিন্তা তো কম-বেশি আমরা সবাই করি! তবে কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা বা উদ্বেগ স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বেগ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কারো দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘট