রুমের কোণায় পড়ে থাকা চেয়ারটিতে কাপড়ের স্তুপ জমে জমে ছোটোখাটো একটা এভারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্টের ডেডলাইন একদম চলেই এসেছে, তবু এখনো শুরু করতে পারছি না। প্রায় প্রতিদিন যা করে এসেছি, যা আমার নিত্যদিনের কাজ, সেগুলোর কথা ভাবলেও প্রচন্ড চাপ অনুভব করছি। মনে হচ্ছে, কাজগুলো ভীষণ কঠিন, কীভাবে যে শুরু করবো তাও যেন বুঝতে পারছি না! কাজ ফেলে রাখার এই অভ্যাসকেই ইংরেজিতে বলে ‘প্রোক্যাস্টিনেশন’।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ যখন অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকে তখন প্রোক্যাস্টিনেশন বা কাজের প্রতি এমন অনীহা হতে পারে। এমন না যে আমরা কাজগুলো করতে চাই না, কিন্তু কাজ সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমাদের চিন্তিত করে। আর আমরা যেহেতু এই অনুভূতি গুলো সহজ ভাবে মেনে নিতে পারি না, তাই ফেলে রাখা কাজ গুলো শুরু করার উদ্যম পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় অনেক সময় মাথায় প্রশ্ন আসে, আমি কি তবে অলস হয়ে যাচ্ছি? এমনটা না ভেবে বরং ভেবে দেখুন, কাজের প্রতি অনাগ্রহের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা। মনের বন্ধু জানাচ্ছে সাধারণত কী কী কারণে আমাদের মধ্যে কাজ নিয়ে অনীহা ও উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয়। আরো বলছে কিছু সহজ উপায়ে কাজের প্রতি অনাগ্রহ দূর করা যায় কীভাবে।
"এমন অবস্থায় অনেক সময় মাথায় প্রশ্ন আসে, আমি কি তবে অলস হয়ে যাচ্ছি?"
শতভাগ সঠিক হিসেবে কাজ করতে চাওয়ার ইচ্ছা থাকা অবশ্যই দারুণ এক গুণ। তবে এই ইচ্ছা তীব্রভাবে লালন করলে মানুষ প্রায়ই ভুলে যায় যে, ভুলও জীবনের অংশ আর ভুল হলে তা সংশোধনের সুযোগও রয়েছে। যারা সব কাজে সব সময় এমন ‘পারফেক্ট’ হবার তাড়নায় ভোগেন, তারা অনেক সময় কাজ শুরু করার আগেই প্রচন্ড উদ্বেগ অনুভব করেন। মনে করতে থাকেন, কাজটি ভালো হবে না, আরো ভালো আইডিয়ার জন্য অপেক্ষা করে দেখি। তারপর যখন বেশ বড় একটা সময় পার হয়ে যায় আর ডেডলাইন একদম সামনে চলে আসে, তখন উদ্বিগ্নতা আরো বাড়তে থাকে। এমনকি এমন সময় একদম হাল ছেড়ে দেয়ার অভ্যাসও অনেকের রয়েছে।
যখন আমার নিজের দক্ষতার উপর আস্থা রাখতে পারি না তখন কাজগুলো আরো বেশি কঠিন মনে হয়। কাজগুলো শুরুই করা হয় না কারণ আমরা সারাক্ষণ ভাবতে থাকি, আমি এটা পারি না বা এটা করলে আমার অনেক ভুল হবে। এ ধরনের ভাবনা নতুন কিছু শেখার বা চেষ্টা করার আগ্রহকেও নষ্ট করে।
অনেক সময় কাজটি দীর্ঘ বলে আমরা কাজ শুরুর আগেই উদ্বিগ্ন ও ক্লান্ত অনুভব করি। বুঝতে পারিনা কোথা থেকে কীভাবে কাজ শুরু করবো। আর কীভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে – সে নিয়েও আমাদের ভাবনার অন্ত থাকে না! এই ভাবনাগুলোও আমাদের মানসিক চাপের কারণ হয়। ফলে কাজটি শুরু করতে দেরি হয় অথবা আমরা অবচেতনভাবেই দীর্ঘ সময় কাজটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
প্রোকাস্টিনেশন কী, কেন হয় তা তো জানা গেল, কিন্তু এই প্রোকাস্টিনেশন থেকে বের হয়ে আসা যাবে কীভাবে? মনের বন্ধু জানাচ্ছে সে কথাইঃ
১। টু-ডু লিস্টঃ একটি টু-ডু লিস্ট তৈরি করে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোকে প্রাধান্য দিন, তালিকার প্রথম দিকে রাখুন। কোন কাজটি কবে শেষ করতে হবে তাও লিখে ফেলুন। তাহলে অনেক কাজ বাকি আছে ভেবে যে মানসিক চাপ আপনি অনুভব করছিলেন, তা থেকে খানিকটা মুক্তি পাবেন। কেননা এই লিখে গুছিয়ে ফেলার মাধ্যমে আসলে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে কাজটি কখন, কীভাবে করতে হবে সে ভাবনার দিকে ধাবিত করছেন।
২। ছোট অংশে ভাগ করে নেয়াঃ কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন। এরপর ছোট ছোট অংশের প্রতিটি কখন, কতক্ষণ সময় নিয়ে করবেন সেটিও ঠিক করে ফেলুন। এভাবে একটি করে ছোট অংশ ধরে এগোতে থাকলে কাজটির বিশালতা আপনাকে উদ্বিগ্ন করবে না।
৩। পোমোদোরো সিস্টেমঃ কাজে মনোযোগ না থাকাও অনেক সময় কাজের প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে পোমোদোরো সিস্টেম (Pomodoro system) হতে পরে আপনার সমাধান। এ সিস্টেম অনুযায়ী, কাজের শুরুতে আপনাকে ২০-৩০ মিনিটের টাইমার সেট করে নিতে হবে। সেই সাথে ঠিক করে নিন, ২০-৩০ মিনিটের এই সময়সীমায় আপনি কতটুকু কাজ শেষ করবেন। একটানা সেই নির্দিষ্ট সময়টুকু কাজ করে ৫ মিনিটের বিরতি নিন। তারপর আবার ২০-৩০ মিনিটের টাইমার সেট করে কাজ শুরু করুন। যে অ্যাসাইনমেন্টটি কিছুতেই শুরু করতে পারছেন না, তার জন্যও এমন টাইমার সেট করে নিন। যখন দেখবেন ছোট ছোট পদক্ষেপে অ্যাসাইনমেন্টটি এগোচ্ছে, তখন আর এ নিয়ে তেমন মানসিক চাপ অনুভব করবেন না।
৪। কাউন্সেলিংঃ এছাড়াও অনেক সময় মানসিক অবস্থার কারণে, পারিপার্শ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে আমরা এতই বেশি উদ্বিগ্ন বা চাপ অনুভব করতে পারি, যা হয়তো একার চেষ্টায় সমাধান করে ফেলা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর সাহায্য নিন, কাউন্সেলিং নিন। কাউন্সেলিং সেবা নিয়ে মনের বন্ধু সবসময়ই আছে আপনাদের পাশে।
যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রথমেই এ সমস্যাটি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, আমাদের এই লেখাটি থেকে আপনি বুঝতে পারবেন কেন একের পর এক কাজ আপনি জমিয়ে রাখছেন। জমে থাকা কাজগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিন, টু-ডু লিস্ট তৈরি করে একেকটি কাজ শেষ করুন। সেইসাথে অবশ্যই নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। মনের বন্ধু’র পক্ষ থেকে আপনাকে অশেষ শুভকামনা!
ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিতএই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।
📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা
আমরা অনেক সময় সামনে থাকা মানুষটির কথা থামিয়ে দিয়ে, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এ অভ্যাসটিও একজন সহমর্মী শ্রোতা হবার পথে বাধা।
দিনের যে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় আপনি মেডিটেশন করবার জন্য বেছে নিতে পারেন। হতে পারে তা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। আবার অনেক সময় কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করেও মেডিটেশন অনুশীলন
এই ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ‘ছুটি’ মানে মুক্তি, আনন্দ, বিশ্রাম! ছুটি শুনলেই মন ছুট লাগাতে চায় দূর তেপান্তরে! তবে অনেক সময়ই দেখা যায় ছুটির দিনেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দাওয়াতে, আপ্যায়নে, সামাজিকতায় আর আতিথেয়তায়
দুশ্চিন্তা তো কম-বেশি আমরা সবাই করি! তবে কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা বা উদ্বেগ স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা মানসিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বেগ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং কারো দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘট