আমাদের মন কত-শত কারণেই না খারাপ হয়! প্রিয় বন্ধু্র সাথে ঝগড়া হলে, পছন্দের বইটি হারিয়ে গেলে, পরীক্ষায় খারাপ করলে আমরা বলি ‘মনটা খুব খারাপ’। কিন্তু মন খারাপ মানেই কি আমি বিষন্নতায় ভুগছি? নাকি ডিপ্রেশনে ভুগছি বলে আমার এমন মন খারাপ লাগছে? ভাবছিলাম এসব কথাই। তারপর একটু পড়াশোনা করে, মনের বন্ধু’র কাউন্সেলরদের সাথে কথা বলে জানলাম মন খারাপ আর ডিপ্রেশনের পার্থক্য।
"মন খারাপ মানুষের মৌলিক, স্বাভাবিক এক অনুভূতি। কিন্তু ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা হলো মানসিক রোগ।"
অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েশন অ্মেরিকা বলছে, মন খারাপ মানুষের এক মৌলিক আবেগ, আর ডিপ্রেশন (বিষন্নতা) হলো এই আবেগের অস্বাভাবিক, মাত্রাহীন বহিঃপ্রকাশ। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, মন খারাপের পেছনে বেশির ভাগ সময় নির্দিষ্ট কারণ থাকে। প্রথমেই যেমন বললাম, প্রিয় বন্ধুর সাথে ঝগড়া, বই হারানো, পরীক্ষার ফলাফল – এমন নানা কিছু হতে পারে মন খারাপের কারণ। তবে বিষন্নতার কারণ এভাবে খুঁজে পাওয়া কঠিন। পারিপার্শ্বিক নানা কারণে, ছোট-বড় নানা অভিজ্ঞতার মিশেলে মানসিক অবস্থার এক বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলে, তখনই তাকে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বলা হয়। ডিপ্রেশনের এক বড় অংশ জুড়ে মন খারাপের তীব্র অনুভূতি ছড়িয়ে থাকে। একজন বিষন্ন ব্যক্তির মন অবশ্যই খুব খারাপ থাকে। তবে সব মন খারাপই ডিপ্রেশন নয়। তাই আপনার মন খারাপ লাগার বিষয়টি আসলে ডিপ্রেশন কিনা, তা বুঝতে নিজেকে প্রশ্ন করুন – কেন আপনার মন খারাপ?
মন খারাপ মানুষের এক স্বাভাবিক আবেগ। এ অনুভূতি ক্ষণস্থায়ী। তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিপ্রেশন দীর্ঘমেয়াদী মানসিক রোগ। তবে এ কথাও সত্যি যে, মন খারাপ থেকেই অনেক সময় ডিপ্রেশনের উৎপত্তি হয়। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আমাদের তীব্র মন খারাপ হয়, শোক আমাদের সমস্ত সত্ত্বাকে আঁকড়ে ধরে। এই তীব্র অনুভূতির বোঝা যদি সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই থাকে, দীর্ঘদিন ধরে আপনার কর্মক্ষমতা, ব্যক্তিগত জীবন ও আচরণকে প্রভাবিত করে, তবে তা ডিপ্রেশনের লক্ষণ । দুই সপ্তাহের বেশি মন খারাপ থাকলে আপনার উচিত মানসিক রোগের চিকিৎসক বা কাউন্সেলরদের সাথে কথা বলা। এক্ষেত্রে আপনি মনের বন্ধু’র সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলরদের সাথেও নির্দ্বিধায় যোগাযোগ করতে পারেন।
আপনি যখন ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তখন দেখবেন আপনার প্রোডাক্টিভিটি বা কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাচ্ছে। যে কাজগুলো প্রতিদিন করেন, যে কাজগুলো দীর্ঘদিন ভীষণ যত্ন নিয়ে করেছেন, তার প্রতি আর আগ্রহ পাবেন না। এক কাজ থেকে আগ্রহ অন্যদিকে চলে যেতেই পারে, তবে যখন সব কাজেই এক ধরনের অনীহা চলে আসবে, তখন তা ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে। কেউ হয়তো পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত খেলতেন, গান গাইতেন। ইদানিং আর কিছুতেই খেলা ও গান গাওয়ার প্রতি আগ্রহ পাচ্ছেন না, পড়ালেখায়ও এসেছে তীব্র অনীহা। এমন সময়ে সত্যিই ভেবে দেখা উচিত – সত্যিই কি শুধু মন খারাপ বলে প্রোডাক্টিভিটি কমে গেলো? নাকি আপনি আসলে বিষন্নতায় ভুগছেন? আপনার এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে মনের বন্ধু সব সময় পাশেই আছে।
আগেই বলেছি, মন খারাপ মানুষের মৌলিক, স্বাভাবিক এক অনুভূতি। কিন্তু ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা হলো মানসিক রোগ। ডিপ্রেশনে ভুগলে চিকিৎসা নেয়া আবশ্যক। এর ফলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, শিক্ষাগত, পেশাগত ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনার স্বাভাবিক জীবন,কাজের গতি ও আচরণ ব্যহত হয়। তাই যদি মনে হয় আপনার মধ্যে ডিপ্রেশনের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তবে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্যবিদের শরনাপন্ন হন।
নিজেকে প্রশ্ন করার অভ্যাস করুন। নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে শিখুন। আপনি যখন নিজেকে ওপরের এই প্রশ্নগুলো নিয়মতি করতে শুরু করবেন, বুঝতে পারবেন আপনার কি আসলে মন খারাপ নাকি ডিপ্রেশনে ভুগছেন। অনেক সময় নিজে নিজে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন মনে হতে পারে, মনে হতে পারে কারো সাথে প্রাণ খুলে কথা বললে হয় সমাধান পাওয়া সহজ হতো। সেক্ষেত্রে মনের বন্ধু সব সময় আপনাদের পাশেই আছে!
সব শেষে বলা যায়, মনের যত্ন নিতে যারা সত্যিই আগ্রহী, তাদের জন্য মেডিটেশন হতে পারে এক দারুণ উপায়। শুধু বুঝতে হবে দিনের কোন সময়টা, কোন ধরনের মেডিটেশন করলে আপনার ভালো লাগবে। এ বিষয়ে মনের বন্ধু’র সাথেও করতে পারেন পরামর্শ। মনের যত্ন ও সুস্থতা বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন নিয়ে আপনি কথা বলতে পারেন আমাদের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলরদের সাথে। আপনার জন্য অসংখ্য শুভ কামনা!
ব্লগটি মনের বন্ধু এক্সপার্ট দ্বারা রিভিউয়ের পরে প্রকাশিতএই ব্লগের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এতে কিছু প্রতীকি ঘটনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ব্লগ বা এর কোনো অংশ পড়ে কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার জন্য লেখক ও ‘মনের বন্ধু’ দায়ী নয়। মনের ওপর চাপ অনুভব করলে বা মানসিকভাবে ট্রিগার্ড অনুভব করলে দ্রুত মনের বন্ধু বা যেকোনো মানসিক স্বাস্থ্যবিদের সাথে যোগাযোগ করুন।
মনের বন্ধুতে কাউন্সেলিং নিতে যোগাযোগ করুন: ০১৭৭৬৬৩২৩৪৪।
📍: ৮ম ও ৯ম তলা, ২/১৬, ব্লক-বি, লালমাটিয়া, ঢাকা
ইদানীং সারাক্ষণ অবসাদগ্রস্থ লাগে। লো মুড মনে হয়। কোন কিছু করতে মন চায় না। ক্লান্তি, আলস্য, অবসাদ, ঘুম ঘুম ভাব যেন লেগেই আছে। মনোযোগ রাখা যাচ্ছে না কোন কিছুতে। আমরা জানি, এগুলো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতার লক
ভালো থাকার সংজ্ঞা না দিয়ে একটা উদাহরণ দিয়েই শুরু হোক লেখাটা। মনে করুন আপনি অনেক দূরে পাহাড়ে বেড়াতে গেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক আনন্দ করছেন, ঘুরছেন, বেড়াচ্ছেন। হঠাৎ রাতের
জানালার পর্দার ফাঁকে আলো আসছে, মুখরিত চারদিকে সবুজের সমারোহ, পাখির কিচিরমিচির, সূর্যের আলোতে ঝলমল চারদিক— এমন একটা দিনেও কারও কারও লাগতে পারে অন্ধকার। এত কিছুর মাঝে জীবনের আনন্দ যেন বিলীন
আমি পারি, আমি পারব। এই লাইন দুটো শুধু যে নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করে তা নয়। কোনো কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব এবং নিষ্ঠাও তুলে ধরে। যে এই লাইন দুটোকে নিজের জীবনে ধারণ করবে কর্মক্ষমতা এবং সফলতা অবশ্যই